রোজা ভঙ্গের কারণ জানার আগে আমাদের অবশ্যই জানা উচিত সওম মূলত কি বা সওমে কি করতে হয়। সওম কি তা আপনারা সবাই ভালভাবেই জানেন। তবুও বলছি,
সাওম বা রোজা হচ্ছে আল্লাহ তাআলাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনও প্রকার খাবার গ্রহণ, পাপ কাজ, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকাকেই সাওম বা রোজা বলা হয়।
রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ
রোজা পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। তাই রোজা রাখার পর সতর্ক থাকতে হয় যেন এমন কিছু না হয়, যার কারণে রোজা ভেঙে যায়। প্রথমত ও সাধারণত তিনটি কারণে রোজা ভেঙে যায়। সেগুলো হলো- খাওয়া, পান করা ও স্ত্রী-সহবাস করা।
তবে এগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারণে রোজা ভেঙে যায়। যেগুলো জেনে রাখা প্রত্যেক রোজাদার মুসলিমের জন্য জরুরি। সংক্ষেপে সেসব কারণ হলো—
- ভুলে খাওয়া বা পান করার পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া বা পান করা। (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
- বিড়ি-সিগারেট বা এ ধরনের ধূমপায়ী কিছু সেবন করা সেবন করা। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
- একত্রে অনেক লবণ খাওয়া। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ১৯৯)
- এমন কোনো বস্তু খাওয়া, যা সাধরণত অখাদ্য। যেমন- কাঠ, লোহা, কাগজ, পাথর, ইত্যাদি। (ফাতওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২; জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
- পাথর, কাদামাটি, তুলা-সুতা, লতাপাতা, খড়কুটো ও কাগজ গিলে ফেলা। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
- নিজের থুতু হাতে নিয়ে গিলে ফেললে। (ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
- ভুলে স্ত্রী সম্ভোগের পর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে খাওয়া বা পানহার করা (ফাতওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৭৫)
- কানে বা নাকের ছিদ্র দিয়ে তরল ওষুধ বা ড্রপ দেওয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১২৭)
- দাঁত দিয়ে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুতুর সম পরিমান বা বেশি হয় এবং কণ্ঠনালিতে চলে যায় বা খেয়ে ফেলা হয়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৬৭)
- পান মুখে দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়া বা ফজরের ওয়াক্ত হওয়া। (ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১৭২)
- পুরুষ বা নারী হস্তমৈথুন করা। (ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খণ্ড : ০৬, পৃষ্ঠা : ৪১৭)
- রোজা স্মরণ থাকা অবস্থায় অজু, গোসল করা অথবা অন্য কোন কারনে কুলি কিংবা নাকে পানি দেওয়ার সময় কণ্ঠনালিতে পানি চলে যাওয়া। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড : ০৪, পৃষ্ঠা : ৪২৯)
- কাউকে জোর-জবদস্তি করে খাওয়ানো বা পানাহার করানো। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০২)
- রাত মনে করে সুবহে সাদিকের পর বা ফজরের ওয়াক্তে সাহরি খাওয়া। (জাওয়াহিরুল ফিকাহ, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ৩৭৮)
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা বা বমি আসার পর তা গিলে ফেলা। (ফাতহুল কাদির, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৩৩৭)
- সূর্যাস্ত হয়ে গেছে বা ইফতারির সময় হয়ে গেছে মনে করে ভুলে দিনে ইফতার করা । (বুখারি, হাদিস : ১৯৫৯)
- বৃষ্টি বা বরফের টুকরো খাদ্যানালিতে চলে যাওয়া। (ফাতাওয়া হিন্দিয়্যা, খণ্ড : ০১, পৃষ্ঠা : ২০৩)
আর যদি রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে স্বামী-স্ত্রী সহবাস অথবা পানাহার করে তবে কাজা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। কাফফারার মাসআলা অভিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের থেকে জেনে নেবে। তবে স্বপ্নদোষ হলে বা শরিরের কোন স্থান থেকে রক্ত বের হলে রোজা ভেঙ্গে যায়না।
রোজার মাকরুহগুলো:
- অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো বা চাখা
- কোনো বস্তু মুখে দিয়ে রাখা
- অনর্থক গড়গড়া করা বা নাকের ভেতর পানি টেনে নেয়া
- ইচ্ছাকৃত মুখে থুথু জমা করে গলাধঃকরণ করা বা গড়গড়া করা।
- গীবত, গালা-গালি ও ঝগড়া-ফাসাদ করা। ভভমজুইউ
- নাপাক অবস্থায় থাকা।
- অশালিন ভিডিও দেখা
- গান বা বাদ্য যন্ত্র শোনা
- মিথ্যা কথা বলা
- অস্থিরতা ও কাতরতা প্রকাশ করা
- কয়লা চিবিয়ে অথবা পাউডার, পেস্ট ও মাজন ইত্যাদি দ্বারা দাঁত ব্রাশ বা পরিষ্কার করা।
সওম মাক্রুহ হলে সওম ভাঙ্গে না বরং তা হালকা হয়ে যায়, তবে একাধিক মাক্রুহ কাজ যা গুনাহ যেমন গান শোনা বা অশ্লিন ভিডিও ইত্যাদি গুনাহর কাজ করতে থাকলে না খেয়ে থাকার কষ্ট ব্যাতিত উক্ত রোজা দ্বারা কোন ফায়দা পাওয়া যাবেনা।
আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের পূর্ণ হক আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন
আরোও পরুনঃ হাদিসের আলোকে সেহরি সময়। ফজর উদয় হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হলে কি করনীয়?