রমযানের রোযা কিংবা অন্য রোজা বা কোন ইবাদত নিয়ত ছাড়া শুদ্ধ হয় না। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আমলসমূহ নিয়ত দ্বারা হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে সেটাই তার প্রাপ্য..." সহিহ মুসলিম ১৯০৭
রোজার নিয়ত কখন করবো?
নিয়তের ক্ষেত্রে শর্ত হল: রাত্রি থাকতে ও ফজরের আগেই নিয়ত করা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোযার নিয়ত পাকাপোক্ক ভাবে করেনি তার রোযা নেই"।[ তিরমিযি (৭৩০)] অন্য হাদিসে আছে
যে ব্যক্তি রাতের বেলায় রোযার নিয়ত করেনি তার রোযা নেই। সুনানে নাসাঈ (২৩৩৪)
“[ আলবানী (রহ) সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (৫৮৩) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]”
সম্পূর্ণ রমজানের জন্য একবারে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। বরং প্রত্যেক রোজার জন্য পৃৃথকভাবে নিয়ত করতে হবে। কেননা প্রতিটি রোযা ভিন্ন ভিন্ন আমল।
-বাদায়িউস সানায়ে : ২/২২৮, রদ্দুল মুহতার : ৩/৩৪৪।
যদি একাধিক রমজানের রোজা কাজা হয়ে যায় তবে কাযা আদায় করার সময় কোন রমজানের রোযার কাযা আদায় করছে এটা নির্দিষ্ট করা জরুরী। তবে যদি কাজা রোজার সংখ্যা অনেক বেশি হয় এবং তা নির্দিষ্ট করা কঠিন হয় তাহলে -জীবনের সর্বপ্রথম কাজা রোজা রাখলাম- এভাবেও নিয়ত করতে পারবে। -আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ির : ১/১১৫
রোযার নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত?
নিয়ত হল অন্তরের আমল নিয়ত ছারা কোন আমলই কবুল হবে না। একজন মুসলিম অন্তরে দৃঢ় ভাবে সিদ্ধান্ত নিবে যে, আগামীকাল সে রোযা রাখবে। তার জন্যে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে "নাওয়াইতু সিয়াম" বা "আসুমু জাদ্দান লাকা" ...ইত্যাদি কিছু মানুষের প্রবর্তিত বিদআতী শব্দাবলী বলে নিয়ত করা শরিয়তসম্মত নয়। সঠিক নিয়ত হচ্ছে ব্যক্তি অন্তরে আগামীকাল রোযা রাখবে বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া।
তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: "যে ব্যক্তির অন্তরে উদিত হয়েছে যে, সে আগামীকাল রোযাদার সেই নিয়ত করেছে" আল-ইখতিয়ারাত' গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-১৯১
আল্-লাজনাহ আদ্-দায়িমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: রমযানের রোযা রাখার নিয়ত করার পদ্ধতি কি?
জবাবে তারা বলেন: রোযা রাখার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে তার নিয়ত হয়ে যাবে। প্রতি রাত্রে রাত থাকতেই রোযার নিয়ত করতে হবে। [ফাতাওয়াল লাজ্নাদ্ দায়িমা (১০/২৪৬)]
অতএব আমরা রোজার নিয়ত ফজরের আজানের পূর্বেই করবো মুখে নয় অন্তরে, নফল রোজার নিয়ত যেমন শবে বরাতের রোজার নিয়ত, আশুরার রোজার নিয়ত আইয়্যামে বীজ সহ সকল রোজায় একইভাবে নিয়ত করবো ইনশাআল্লাহ।
সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান দিলে করণীয় কী?
সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। যথারীতি রোজা পালন করবেন। তবে সেহরির শেষ সময়ের পর ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃত পানাহার করায় রোজা ভঙ্গ হয়েছে বিধায় এই রোজাটি রমজানের পর পুনরায় কাজা করতে হবে।
কিন্তু আজান শোনার পরও যদি পানাহার বন্ধ না করেন, তাহলে কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। কারণ, প্রথমে ভুলবশত খাওয়া হলেও পরে ইচ্ছাকৃত খাওয়ার দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়েছে।
স্মর্তব্য, আজান কখনও সেহরির সময়ের মধ্যে দেওয়া হয় না; আজান ফজরের ওয়াক্ত হওয়ারও একটু পরে দেওয়া হয়। কারণ, সেহরির সময় বাকি থাকলে ফজরের ওয়াক্ত হয় না। আর ওয়াক্ত হওয়ার আগে আজান দিলে আজান আদায় হবে না।
মনে রাখতে হবে, আজান হলো ফজরের নামাজের জন্য, সেহরি খাওয়া বন্ধ করার জন্য নয়। তাই সেহরি এর আগেই বন্ধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, যে হাদিস শরিফে যে আজানের পরেও খাওয়ার কথা আছে, তা হলো তাহাজ্জুদের আজান; যা সাহাবিরা তাহাজ্জুদে ডাকার জন্য দিতেন এটা ফজরের আজান নয়। যা এখনও মক্কা ও মদিনায় প্রচলিত আছে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)।
সুতরং ফজরের আজান হলেই খাওয়া বন্ধ করতে হবে নাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন।
আরাও পরুনঃ রমজানে কি শয়তান বন্দি থাকে? রমজানে মানুষ কেন পাপ কাজ করে?