শবে কদরের নামাজের নিয়ম , রাকাআত সংখ্যা, দোয়া ও ফজিলত । শবে কদর কবে ২০২৩

islamicinfoblog, শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের দোয়া, শবে কদর নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদরের দোয়া, লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম, লাইলাতুল কদরের ফজিলত, শবে কদর কবে ২০২৩,
শবে কদরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে আমরা আগে জানবো শবে কদর কি? 

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা সূরা আল কদরে বলেন 

সুরা কদর, islamicinfoblog, শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের দোয়া, শবে কদর নামাজের নিয়ম, শবে কদরের নামাজ কত রাকাত, শবে কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদরের দোয়া, লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম,  শবে কদর কবে ২০২৩,

শবে কদর বা লাইলাতুল কদর কি? 

লাইলাতুল কদর হলো আরবি শব্দ। আরবিতে লাইল শব্দের অর্থ রাত এবং কিন্তু ক্বাদর শব্দের অর্থ বিভিন্ন হতে পারে। আর সে জন্যই এর নামকরণের কারণও বিভিন্ন যেমনঃ 

১। কদর অর্থ  তকদীর। সুতরাং লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের মানে তকদীরের রাত বা ভাগ্য-রজনী। মহান আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য সৃষ্টির রুযী, মৃত্যু ও ঘটনা ঘটনের কথা লিপিবদ্ধ করে থাকেন। 

২। কদরের আর একটি অর্থ হল, মাহাত্ম্য, শান, মর্যাদা, ইত্যাদি। এ অর্থে শবে কদরের মানে হবে মহিয়সী রজনী। 

৩। ক্বদরের আর এক মানে হল সংকীর্ণতা; এ রাতে আসমান থেকে জমিনে এত বেশি সংখ্যক  মালাইকাহ বা ফেরেশতা অবতরণ করেন যে, পৃথিবীতে তাদের জায়গা হয় না; বরং তাদের সমাবেশের জন্য পৃথিবী সংকীর্ণ হয়; তাই এ রাতকে শবেকদর বা সংকীর্ণতার রাত বলা হয়। 

শবে কদর নামাজের নিয়ম 

লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়তে হবে বা কিভাবে পড়বো? , শবে কদর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত: লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভের জন্য  রমজানের শেষ দশকে বিশেষ করে বেজোড় যেমন ২১/২৩/২৫/২৭/২৯ রাতে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নফল সালাত বা নামাজ আদায় করা। 

সহিহ হাদিস থেকে কিয়ামুল লাইল বা  রাতের সালাত আদায়ের মোট ছয়টি পদ্ধতি পাওয়া যায়। তার যে কোনটির একটা অবলম্বন করা বৈধ। আপনি শবে কদরে যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।  পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলোঃ

প্রথম পদ্ধতি: ১৩ রাকাত

এশার সালাতের পর দু’রাকআত পড়ে এর সূচনা করবে। সর্বাগ্রগণ্য মত অনুযায়ী এ দুই রাকআত হল এশার ফরজ সালাত পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নাত অথবা ঐ নির্দিষ্ট দু’রাকাত ছালাত, যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) রাতের সালাত শুরু করতেন। যেমনটি গত হয়েছে। অতঃপর অত্যন্ত দীর্ঘ দু’রাকআত আদায় করবে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর পূর্বের চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর তদপেক্ষা কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দুই রাকাআত পড়বে। অতঃপর এক রাকাআত বিতর পড়বে।   

দ্বিতীয় পদ্ধতি : ১৩ রাকাত

দুই দুই করে আট রাকাত পড়বো এবং প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। অতঃপর পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে। শুধুমাত্র পঞ্চম রাকাতে বসবে এবং সালাম ফিরাবে।

তৃতীয় পদ্ধতি : ১১ রাকাত

প্রত্যেক দুই রাকাআত পর পর  সালাম ফিরাবে এবং এক রাকাত বিতর পড়বে।

চতুর্থ পদ্ধতি : ১১ রাকাত

এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত এক সালামে অতঃপর পরের চার রাকাত এক সালামে পড়বে। অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়বে। তবে তিন রাকাত বিতর সালাতে দুই রাকাত পর বসা শরীআত সম্মত নয়।

পঞ্চম পদ্ধতি : ১১ রাকাত

১১ রাকাআতের মধ্যে একটানা আট রাকাত আদায় করে ৮ম রাকাআতে বসবে এবং তাশাহুদ ও নবী সঃ এর দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকআত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল নয় রাকাত। অতঃপর বসে দুই রাকাত আদায় করবে।   

ষষ্ঠ পদ্ধতি : ৯ রাকাত

তার মধ্যে ছয় রাকাআত একটানা পড়ে ষষ্ঠ রাকাতে বসবে অতঃপর আত্তাহিয়্যাতু বা তাশাহুদ ও নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদ ( দুরুদে ইবরাহীম) পড়ে পূর্বের মতাে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল সাত রাকআত। অতঃপর বসে দুই রাকাত পড়বে। 

এই পদ্ধতি গুলো রাসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে সুস্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। 

“তাহাবী, হা/১৬০৩- হাকেম- হা/১১২৮- দারাকুতনী, হা/১৬৬০ -বায়হাকী, হা/৪৭৭৬

এই পাঁচ ও তিন রাকাআত বিতর চাইলে এক বৈঠকে ও এক সালামে আদায় করবে; যেমনটি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে; আর চাইলে প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে; যেমনটি তৃতীয় ও অন্যান্য পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে”। আপনি চাইলে দুই দুই রাকাআত করে অনেক রাকাআত আদায় করতে পারেন এটা জায়েজ।  

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত

নিয়ত মানে মনের সংকল্প ইচ্ছা করা। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই।

মহান আল্লাহ বলেন,

তাদেরকে এছাড়া কোন আদেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহর এবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে; এটাই সঠিক ধর্ম। (কুরআন ৯৮/৫) 

আর মহানবী সঃ বলেন,

সমস্ত কাজ  নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যার সে নিয়ত করে। (সহীহ বুখারী হাদিস নং ১) 

বলাবাহুল্য যে, নামাজের শুরুতেই যদি কেউ সমস্ত নামাযের নিয়ত একবার করে নেয়, তাহলে তাই যথেষ্ট; প্রত্যেক ২ রাকাতে নিয়ত করা জরুরী নয়; অবশ্য নামাজ পড়তে পড়তে কেউ কোন প্রয়োজনে তা ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে লাগলে নতুন করে আবার নিয়তের প্রয়োজন; সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত করা জরুরী; কিন্তু পড়া বিদআত। এজন্য আমরা মনে মনে নিয়ত  করবো।  

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

islamicinfoblog, শবে কদরের দোয়া, শবে কদরের দোয়া, শবে কদর নামাজের নিয়ম, শবে কদরের মর্যাদা,বে কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস, লাইলাতুল কদরের দোয়া, লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম, লাইলাতুল কদরের ফজিলত, শবে কদর কবে ২০২৩,

 বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্ম

মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআনকে অবতীর্ণ করেছেন এবং সে রাতের মাহাত্ম্য ও ফজিলত বর্ণনা করার জন্য কুরআন মাজীদের পূর্ণ একটি সূরা নাজিলকরেছেন এবং সেই সূরার নামকরণও হয়েছে তারই নামে ৯সুরা আল কদর)  মহান আল্লাহ বলেন,

“নিশ্চয় আমি  কুরআনকে শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জান, শবে কদর কি? শবে কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ”  

এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি। সুতরাং “যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করল, আসলে সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও বেশি সময় ধরে ইবাদত করল”। 

বরকতময়, কল্যাণময় ও মঙ্গলময় রাত 

মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, “আমি এ কুরআনকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি” 

উক্ত বরকতময় রাত্রি হল ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা শবে কদর; আর শবে কদর অন্য কোন মাসের রাত্রে নয় নিঃসন্দেহে রমজানে। বলা বাহুল্য, ঐ রাত্রি শবে বরাতের রাত্রি নয়; যেমন অনেকে মানুষ মনে করে থাকে এবং ঐ রাত্রে বৃথা নিজের মনগড়া ইবাদত করে থাকে; কারণ, কুরআন (লাওহে মাহফুজ থেকে) অবতীর্ণ হয়েছে (অথবা তার অবতরণ শুরু হয়েছে) রমজান মাসে। কুরআন বলে,

রমজান মাস; যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (কুঃ ২/১৮৫) 

আর এ কথা বিদিত যে, শবে কদর হল রমজানে; শাবানে নয়। 

 লাইলাতুল কদর ভাগ্য রজনী

এই রাত সেই ভাগ্য-রাত; যাতে পরবর্তী ১ বছরের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।  যা তাকদিরে লেখা হয়। 

ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় 

এটা হল সেই রাত; যে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাকুল তাদের প্রতিপালকের আদেশে অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ, যে কাজের ফয়সালা ঐ রাতে করা হয় তা কার্যকর করার জন্য তারা অবতরণ করেন। 

এ রাত হল সালাম ও শান্তির রাত

মহান আল্লাহ বলেন,

সে রজনী ফজর উদয় অর্থাৎ সুবহে সাদিক শেষ হয়ে ফজরের ওয়াক্ত পর্যন্ত শান্তিময়। পূর্ণ রাতটাই শান্তিতে পরিপূর্ণ, তার মধ্যে কোন প্রকার অশান্তি নেই। রাত্রি জাগরণকারী ইবাদতে মশগুল মুমিন নারী-পুরুষের জন্য এ হল শান্তির রাত্রি। শয়তান তাদের মাঝে কোন প্রকার অশান্তি প্রবেশ করতে পারে না। “অথবা সে রাত্রি হল নিরাপদ। শয়তান সে রাত্রে কোন প্রকার অশান্তি ঘটাতে পারে না। অথবা সে রাত হল সালামের রাত। এ রাতে অবতীর্ণ ফেরেশতাকুল ইবাদতকারী মুমিনদেরকে সালাম জানায়”।  

এ রাত্রি হল কিয়াম ও গুনাহ-খাতা মাফ করাবার রাত্রি

মহানবী সঃ বলেন, 

যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবে কদরের রাত্রি জাগরন করে  কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বের সকল গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়।

বুখারী ৩৫, মুসলিম ৭৬০

বলা বাহুল্য, এ রাত্রি হল ইবাদতের রাত্রি। এ রাত্রি ধুমধাম করে পান-ভােজনের, আমােদখুশীর উৎযাপন করার রাত্রি নয়। আসলে যে ব্যক্তি এ রাত্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সেই সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। 

লাইলাতুল কদরের দোয়া

আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সঃ আমি যদি লাইলাতুল কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কি দুআ’ পড়বো? তিনি বলেনঃ তুমি বলবে, 

”.اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني”

অর্থঃ “হে আল্লাহ! তুমি একমাত্র ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও”। 

ইবনে মাজাহ ৩৮৫০

শবে কদর কবে

রামাদান মাসের শেষ দশকের যে কোন একটি রাত্রি 

একদা মহানবী সঃ শবে কদরের অন্বেষণে রমজানের প্রথম দশকে ইতেকাফ করলেন। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করে ২০শের ফজরে বললেন, আমাকে শবে কদর দেখানাে হয়েছে; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে; অতএব তোমরা রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত্রে তা (ইবাদতের মাধ্যমে) অনুসন্ধান কর; 

বুখারী ২০১৬ মুসলিম ১১৬৭ 

পূর্বের হাদীসের ইঙ্গিত অনুসারে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলিতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা  সবথেকে বেশি। সুতরাং ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ এই ৫ রাত হল শবে কদর হওয়ার অধিক আশাব্যঞ্জক রাত।  এজন্য রাসুলুল্লাহ (সঃ) শেষ জীবন অবধি রমজানের শেষ দশকের পুরােটাই ইতিকাফ করে গেছেন। 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শবে কদর নসিব করুন এবং তার হক আদায় করার তৌফিক দান করুন, আমিন। 


আরও পড়ুনঃ এখনি জেনে নিন রোজা ভঙ্গের কারণ | রোজা মাকরুহ হওয়ার কারন সমূহ



x

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.