সেহরি খাওয়ার হুকুম কি?
মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে রোযার জন্য সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব এবং যে ব্যক্তি তা ইচ্ছাকৃত খায় না সে গোনাহগার হয় না। আর এ কারণেই যদি কেউ ফজরের পর জাগে এবং সাহরী খাওয়ার সময় না পায় তবে তার জন্য জরুরী রোযা রেখে নেওয়া। এতে তার রোযার কোন ক্ষতি হবে না। বরং ক্ষতি হবে তখনই হবে যখন সে কিছু খেতে হয় মনে করে তখনই (ফজরের পর) কিছু খেয়ে ফেলবে। যদি এভাবে খেয়ে ফেলে তবে সে ক্ষেত্রে তাকে সারা দিন খাওয়া পানাহার করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং রমাযান পরে সেই দিন কাযা করতে হবে।
সেহরী খাওয়া যে উত্তম তা প্রকাশ করার জন্য মহানবী (সা) উম্মতকে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি সেহরীকে বরকতময় খাবার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তোমরা সেহরী খাও। কারণ, সেহরীতে বরকত আছে।’’[1] ‘‘তোমরা সেহরী খেতে অভ্যাসী হও। কেননা সেহরীই হল বরকতময় খাদ্য।’’[2]
ইরবায বিন সারিয়াহ বলেন, একবার রমাযানে আল্লাহর রসূল (সা) আমাকে সেহরী খেতে ডাকলেন; বললেন, ‘‘বরকতময় খানার দিকে এস।’’[3]
সেহরীতে বারাকত থাকার মানে হল, সেহরী রোযাদারকে সবল রাখে এবং রোযার কষ্ট তার জন্য হালকা করে। আর এটা হল শারীরিক বরকত। পক্ষান্তরে শরয়ী বরকত হল, রসূল (সা.) এর আদেশ পালন এবং তাঁর অনুসরণ।
মহানবী (সা.) এই সেহরীর গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে তা দিয়ে মুসলিম ও আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের) রোযার মাঝে পার্থক্য চিহ্নিত করেছেন। তিনি অন্যান্য ব্যাপারে তাদের বিরোধিতা করার মত তাতেও বিরোধিতা করতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রোযা ও আহলে কিতাবের রোযার মাঝে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া।’’[4]
[1] (বুখারী ১৮২৩ ও মুসলিম ১০৯৫নং)
[2] নাসাঈ সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৪০৮১নং)
[3] আবূ দাঊদ, নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ ও সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৭০৪৩নং)
[4] (মুসলিম ১০৯৬,
কি খেলে সেহরী খাওয়া হবে?
অল্প-বিস্তর যে কোন খাবার খেলেই সেহরী খাওয়ার হুকুম পালন হয়ে যাবে। এমনকি কেউ যদি এক ঢোক দুধ অথবা পানিও খায় তাহলে তারও সেহরী খাওয়ার সুন্নত পালন হয়ে যাবে। আর এই সামান্য পরিমাণ খাবারেই রোযাদার এই বিরাট ফরয রোযা পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করতে বল পাবে এবং ফেরেশতা তার জন্য দুআ করবে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (স) বলেন, ‘‘সেহরী খাওয়াতে বারাকাত আসে। সুতরাং তোমরা তা খেতে ছেড়ো না; যদিও তাতে তোমরা এক ঢোক পানিও খাও। কেননা, যারা সেহরী খায় তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতা দুআ করতে থাকেন।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমরা সেহরী খাও; যদিও এক ঢোক পানিও হয়।’’[2]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সঃ) বলেন, ‘‘মুমিনের শ্রেষ্ঠ সেহরী হল খেজুর।’’[3]
অবশ্য সেহরী খাওয়াতে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়। কারণ, বেশী খাওয়া পানাহার করার ফলে ইবাদত ও আনুগত্যে আলস্য সৃষ্টি হয়।
কিছু লোক আছে, যারা গলায় গলায় পানাহার করে এমনভাবে পেট পূর্ণ করে নেয় যে, মনে হয় তার কষ্ট হচ্ছে। যার ফলে ফজরের নামাযে বড় আলস্য ও শৈথিল্যের সাথে উপস্থিত হয় এবং মসজিদে আল্লাহর যিকিরের জন্যও সামান্য ক্ষণ বসতে সক্ষম হয় না। আর দিনের বেলায় পেটের বিভিন্ন প্রকার কমপে½নের শিকার হয়। অথচ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘উদর অপেক্ষা নিকৃষ্টতর কোন পাত্র মানুষ পূর্ণ করে না। আদম সন্তানের জন্য ততটুকুই খাদ্য যথেষ্ট, যতটুকুতে তার পিঠ সোজা করে রাখে। আর যদি এর চেয়ে বেশী খেতেই হয় তাহলে যেন সে তার পেটের এক তৃতীয়াংশ আহারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানের জন্য এবং অন্য আর এক তৃতীয়াংশ শবাস-প্রশবাসের জন্য ব্যবহার করে।’’[4]
[1] (সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩৬৮৩নং)
[2] (সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ২৯৪৫নং)
[3] (আবূ দাঊদ ২৩৪৫ নং)
[4] (আহমাদ, মুসনাদ, তিরমিযী ২৩৮০, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৫৬৭৪নং)
আরোও পড়ুনঃ রোযার নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত? সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে করণীয় কী?