রমজানে কি শয়তান বন্দি থাকে? রমজানে মানুষ কেন পাপ কাজ করে?

রমজানে শয়তান বন্দি হাদিস, রমজানে কি শয়তান বন্দি থাকে, রমজানে মানুষ কেন পাপ কাজ করে,

রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এই  মাসে অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। তাহলে প্রশ্ন জাগে, রমজান মাসে শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকলে মানুষ রমজানে কিভাবে পাপ করে? এর বেশ কিছু জবাব হাদিসবিশারদরা দিয়েছেন আসুন আমরা যেনে নেই! 

রমজানে শয়তান বন্দি থাকার হাদিস

আমরা আনেকেই এটা নিয়ে দ্বিধায় পরি যে আসলেই কি রমজান মাসে সয়তান বন্দি থাকে কিনা? 

জি হা! রমজানে আল্লাহ তা-আলা রহমত স্বরূপ সয়তানকে বন্দি রাখেন, মুসলিম শরিফে বর্ণিত আছে 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - رضى الله عنه - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم

قَالَ ‏ "‏ إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّار وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান উপস্থিত হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুষ্ট শয়তানদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৭৯)

"عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم" ‏ "‏ أَتَاكُمْ رَمَضَانُ شَهْرٌ مُبَارَكٌ فَرَضَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ وَتُغَلُّ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ لِلَّهِ فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا فَقَدْ حُرِمَ…‏.‏سنن النسائي 2106 ‏"‏  

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কাছে রামাদান এসেছে, একটি বরকতময় মাস, যে মাস মহান আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, এতে আসমান সমূহের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেক শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়েছে, এতে আল্লাহর জন্য রয়েছে একটি রাত যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, ( কদরের রাত)  যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় সে বঞ্চিত হয়। (সুনানে আন নাসায়ী 2106)

শয়তান বন্দি থাকলে মানুষ কেন পাপ কাজ করে?  

এটা আমাদের সমাজের একটা কমন প্রশ্ন! যে রমজানে শয়তান বন্দি থাকলে মানুষ কেন পাপ কাজ করে?  প্রশ্নটা খুবই লজিক্যাল তবে একটা কথা আমাদের বুঝতে হবে যে শয়তান শেকলে বাধা কিন্তু শয়তান মারা যায়নি বা তাকে মেরে ফেলা হয়নি। তার ক্ষমতা এখনো আছে কিন্তু তিব্রতা অনেক কম।

একটা উদাহরন দিলে বিষয়টা বুঝতে সহজ হবে। 

ধরুন একটা সিংহকে বাঁধা হল, এখন সিংহর ক্ষমতা আছে কিন্তু তার তিব্রতা অনেক কম, তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখলে আপনার ক্ষতি করতে সে সক্ষম। এজন্য চিরিয়াখানায় আপনি দেখবেন সিংহর খাঁচার ৩/৪ হাত দূরে একটা লোহার ব্যারিকেট দেওয়া যাতে সে কোন ক্ষতি করতে না পারে। এটা হল নিরাপদ দূরত্ব। 

এজন্য আমাদের বন্দি শয়তানের কাছে যাওয়া অর্থাৎ তার পদাঙ্ক অনুসরন করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন। 

وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ

শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। ( সুরা বাকারা আয়াত ১৬৮)

মানুষ সাধারনত পাপ কাজ করতে করতে তার অভ্যস্ত হয়ে যায়, যেমন ধরুন একজন ড্রাগ এডেক্টেড ব্যাক্তি কোন এক ড্রাগ ব্যাবসায়ির থেকে ড্রাগ কিনে, হঠাৎ সেই ব্যাবসায়ি গ্রেফতার হল। তখন কি ড্রাগ এডেক্টেড ব্যাক্তি ড্রাগ  নেওয়া বন্ধ করে দিবে? অবশ্যই না সে তখন অন্য ব্যাবসায়িকে খুজে বের করবে। 

সুতরং শয়তান বন্দি থাকলেও আমার নফসকে শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করা থেকে বিরত রাখতে হবে তবেই আমি শয়তান বন্দি থাকার নেয়ামতকে কাজে লাগাতে পারব ইনশাআল্লাহ। এব্যাপারে পূর্ববর্তী সালাফগনের মতামত হলঃ 

কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন, 

শয়তান শিকলে আবদ্ধ থাকার অর্থ আক্ষরিক ও রূপক উভয় অর্থেই হতে পারে। রূপক অর্থে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রমজানে শয়তানের ধোঁকা-প্রবঞ্চনার হার কমে যায়, অন্যায় কাজ কম হয় এবং মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকে। এ অর্থে উল্লিখিত হাদিসে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যার বাস্তবতা আমরা সবাই স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে থাকি। (ইকমালুল মুলিম : ৪/৬)

আর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করা হলে হাদিসের অর্থ হলো, মানুষ পাপ করে দুই কারণে—১. তার কুপ্রবৃত্তি ও বদ-অভ্যাসের কারণে; ২. শয়তানের প্ররোচনায়। রমজানে শয়তান বন্দি থাকলেও কুপ্রবৃত্তির কারণে মানুষ পাপ করে থাকে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)

আল্লামা আইনি (রহ.) বলেন, 

শয়তানকে ওই সব রোজাদার থেকে দূরে আবদ্ধ রাখা হয়, যারা রোজার আদব ও শর্ত সঠিকভাবে পালন করে। কিন্তু যারা সেসবের ধার ধারে না, তাদের থেকে শয়তানকে আবদ্ধ না-ও রাখা হতে পারে। (উমদাতুল কারি : ১০/২৭০)

পাপের প্রভাব

রমজানের আগের করা পাপের প্রভাবে মানুষ পাপ করে থাকে। যেমন একটি লোহা দীর্ঘ সময়  আগুনে রাখার পর তা থেকে বের করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ তার প্রভাব বাকি থাকে, একইভাবে গাড়ির চাকা দীর্ঘ সময় চলার পর থামানো হলেও কিছুক্ষন চলতে থাকে; ঠিক তেমনি ১১ মাসের পাপের প্রভাবে রমজানেও কারো কারো কাছ থেকে পাপ হয়ে যায়। 

সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না

কোনো কোনো হাদিস ব্যাখ্যাকারী বলেছেন, রমজানে সব শয়তানকে বন্দি করা হয় না, অতিরিক্ত দুষ্ট শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই অন্য শয়তানদের প্ররোচনায় মানুষ পাপ করে। (ফাতহুল বারি : ৪/১১৪)

মানুষ শয়তানের প্রভাব 

মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনের সুরা আন নাসে বান্দাদের মানুষ শয়তান ও জিন শয়তান উভয় থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, যারা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে মানুষের মধ্যেও এক ধরনের শয়তান রয়েছে, যারা মানুষকে কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। রমজানে জিন শয়তানকে বন্দি রাখা হলেও মানুষরূপী শয়তানদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।

শয়তানের পরোক্ষ হস্তক্ষেপ

অনেক আলেমের মতে, রমজানে বন্দি থাকার কারণে শয়তানের প্রত্যক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ  বন্ধ থাকলেও পরোক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ বন্ধ থাকে না। তাই মানুষ পাপ করে। (বিস্তারিত দেখুন : শরহুন নববী আলা মুসলিম : ৭/১৮৭, শরহুস সুয়ূতি-আলা মুসলিম : ৩/১৮৩, মিরকাতুল মাফাতিহ : ৪/১৩৪১, ফয়জুল বারি : ৪/৩২৭) 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমজানের পূর্ণ হক আদায় করার তৌফিক দান করুন গুনাহ থেকে বেঁচে জান্নাত লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমিন

আরোও পড়ুনঃ রোযার নিয়ত উচ্চারণ করা বিদআত? সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে করণীয় কী?


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.