থার্টিফার্স্ট নাইট (New Year’s day) এবং ইসলামিক সংস্কৃৃতি, মুসলিম হিসেবে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়

থার্টিফার্স্ট নাইট,ইসলামিক সংস্কৃৃতি,New Year’s day, থার্টিফার্স্ট নাইট (New Year’s day)মুসলিম হিসেবে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়

ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ দিবাগত রাতেকে থার্টিফার্স্ট নাইট বা New Year’s day বলা হয়। পুরনো বছরকে বিদায় জানানো ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উপলক্ষে খ্রিস্ট বর্ষের ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২ টা ১ মিনিটকে থার্টিফার্স্ট হিসাবে উদযাপন করা হয়। নতুন বছর পালনের প্রচলন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৩ সালে। পরে জুলিয়াস সিজার একটি নতুন বর্ষপঞ্জিকার প্রচলন করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে, যা জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। রোমে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অন্তর্গত বছরের প্রথম দিনটি জানুস দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। জানুস প্রবেশপথ বা সূচনার দেবতা। তার নাম অনুসারেই বছরের প্রথম মাসের নাম জানুয়ারি করা হয়।


যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। আর পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৮৫)

আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।


হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি অনারবীয় দেশে বসবাস করে, সে যদি সে দেশের মেহেরজান (নববর্ষ) উদযাপন করে এবং বাহ্যিকভাবে তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে এমনকি এমত অবস্থায় সে যদি মৃত্যুবরণ করে, তা হলে কিয়ামতের দিন তাকে তাদের (কাফিরদের) সঙ্গে হাশর করা হবে’ (বায়হাকি মাজমুয়াতুত তাওহীদ : ২৭০)

ইমাম আবু হানিফা রহ:-এর দাদা তাঁর পিতাকে পারস্যের নওরোজের দিন (নববর্ষের দিন) আলী রা:-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং কিছু হাদিয়াও পেশ করেছিলেন। (হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে) আলী রা: বললেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম’ মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। (আখবারু আবু হানিফা) অর্থাৎ মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নবউদ্যমে আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহ করবে। আলী রা:-এর এ কথা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, নববর্ষ কে কেন্দ্র করে পরস্পর উপহার আদান-প্রদান এবং শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো গুরুত্ব ইসলামে নেই।


থার্টি ফার্স্ট নাইটের ক্ষতিকর দিকসমূহ:

মুসলিম হিসেবে আমাদের সবারই এ বিশ্বাস থাকা অপরিহার্য যে, ইসলামে যা কিছু হালাল বা অনুমোদিত, তার সব কিছুতেই রয়েছে মানব জাতির সমূহ কল্যাণ ও নানাবিধ উপকার। পক্ষান্তরে ইসলামে যা কিছু হারাম বা নিষিদ্ধ, তার সব কিছুতেই রয়েছে মানব সম্প্রদায়ের জন্য সুনিশ্চিত অকল্যাণ ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি। কেউ যদি এ ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোনো সম্পর্ক রয়েছে , আল্লাহ তায়ালা এ কার্যক্রম দ্বারা  মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন তবে তা শিরকে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আঁটসাঁট পোশাক পরা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনাগান,গান বাজনা, ডিজে (উলঙ্গ নৃত্য), যুবক-যুবতীদের বাধাহীন উল্লাস, জেনা ব্যভিচার, ট্যাটু আঁকা, আতশবাজি, পটকাবাজি,  অর্থ অপচয়, সময়ের অপচয়, শিরকযুক্ত স্লোগান এসব কোনটাই ইসলামী সংস্কৃতি হইতে পারে না


আমাদের আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়:

 ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজি নববর্ষ-সংক্রান্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ এতে কয়েক ধরনের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড রয়েছে।
এক. নগ্নতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচারপূর্ণ অনুষ্ঠান।
দুই. গান ও বাদ্যপূর্ণ অনুষ্ঠান।
তিন.শিরকপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, চিন্তাধারা ও সংগীত।
চার. সময় অপচয়কারী অনর্থক বাজে কথা ও কাজ।
এমতাবস্থায় প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হলো, নিজে এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা এবং মুসলিম সমাজ থেকে এই ইমানবিধ্বংসী প্রথা উচ্ছেদে নিজ নিজ সাধ্য ও অবস্থান অনুযায়ী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো
। আমাদের করণীয় হলো—
এক. মসজিদের ইমামরা এ বিষয়ে মুসল্লিদের সচেতন করে বিরত থাকার উপদেশ দিতে পারেন।
দুই. যাদের নিজস্ব প্রভাব ও দাপট রয়েছে, তাদের কর্তব্য হবে অধীনস্থদের এ কাজ থেকে বিরত রাখা
তিন.  ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকে তাঁর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, সহপাঠী, পরিবারের মানুষ ও প্রতিবেশীকে উপদেশ দিতে পারেন এবং নববর্ষ পালনের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন।
চার. এ ছাড়া পরিবার প্রধানরা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন যে তার পুত্র-কন্যা, স্ত্রী কিংবা তাঁর অধীনস্থ অন্য কেউ যেন নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়।


পরিশেষে:

থার্টিফার্স্ট নাইট বা New Year’s day শুধু বাংলাদেশের রাষ্টধর্ম ইসলামের মানদণ্ডেই অবৈধ তা নয় বরং বাঙালি সংস্কৃতিতেও এর কোনো বৈধতা নেই।  এমন সংস্কৃতির কারণে আমাদের মাঝে বিজাতীয় কালচারের প্রতি ভালোবাসার জন্ম নেবে। আসুন, আমরা অনতিবিলম্বে এ উৎসব থেকে আমাদের ঈমান ও সমাজবিধ্বংসী অপসংস্কৃতি পরিত্যাগ করে সভ্যতা-সংস্কৃতিতে, আচার-আচরণে নিজেদের সুস্থ সংস্কৃতির বিকশে ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে  সচেষ্ট হই। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক  দিন। আমিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.